ব্যক্তিজীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (পাঠ ২)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি - প্রাত্যহিক জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি | NCTB BOOK
958
Summary

এই লেখায় সাগরের মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

সাগরের দিনটি শুরু হয় মোবাইলের এলার্মে, যেখানে সে তার বন্ধুর জন্মদিনের কথা মনে করে।

  • সাগর সকালবেলা টেলিভিশনে খবর শোনে, সংবাদে দেশজ ভালো-মন্দ তথ্য পায়।
  • সে তার ল্যাপটপে ই-মেইল পরীক্ষা করে এক ভাইয়ের পাঠানো সুন্দর ছবি প্রিন্ট করে।
  • গান শোনার সময় ই-বুক রিডারে বই পড়ার মাধ্যমে সময় কাটিয়ে দেয়।
  • খাবারের অভাব বুঝতে পেরে সে ইন্টারনেটে খাবারের অর্ডার দেয়, যা জিপিএসের সাহায্যে দ্রুত পৌঁছে যায়।
  • নিউট্রিনোর তথ্য জানতে উইকিপিডিয়ায় গবেষণা করে এবং নতুন সিনেমা ডাউনলোড করে রাতের জন্য।
  • বন্ধুর জন্য বইয়ের অর্ডার দেয় এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অবস্থা চেক করে।
  • মায়ের সাথে ফোনে কথা বলে পিতার চোখের ডাক্তারি পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করে।
  • বন্ধুর জন্মদিনের ক্যাটারিং সত্ত্বেও রাতের খবর দেখে সংকটমুক্ত হয়ে ঘুমাতে যায়।

সম্পূর্ণ দিনটি চলাকালীন সাগর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক কাজ সম্পন্ন করে, যা কিছু বছর আগে কল্পনা করা সম্ভব ছিল না।

দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রতি মুহূর্তে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করি। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা এত অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে অনেক সময় বিষয়টা আমরা লক্ষ পর্যন্ত করি না। এটির ব্যবহার কত ব্যাপক সেটা বোঝার জন্যে আমরা কাল্পনিক একজন মানুষের একটা দিনের কথা চিন্তা করি- ধরা যাক তার নাম সাগর।

কম্পিউটার ব্যবহার করে গান শোনা যায়

সাগরের ঘুম ভাঙল এলার্মের শব্দে, সে তার মোবাইল টেলিফোনে ভোর ছয়টার এলার্ম দিয়ে রেখেছিল। ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথমেই তার মনে পড়ল আজ ছুটির দিন, তাকে কাজে যেতে হবে না! সাথে সাথে তার মনটা ভালো হয়ে গেল। এলার্মটা বন্ধ করার সময় লক্ষ করল সেখানে ডেস্ক ক্যালেন্ডার তাকে মনে করিয়ে দিয়েছে আজ তার বন্ধুর জন্মদিন, বিকেলে তার বাসায় জন্মদিনের উৎসব।

হাত-মুখ ধুয়ে নাশতা করতে করতে সে টেলিভিশনে ভোরের খবরটা শুনে নেয়। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে শুনে তার মনটা ভালো হয়ে যায়। আবার বঙ্গোপসাগরে একটা নিম্নচাপ হয়ে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে সাগরের খানিকটা দুশ্চিন্তাও হলো।

নাশতা করে সাগর তার ল্যাপটপটি নিয়ে বসে, প্রথমেই সে তার ই-মেইলগুলো দেখে, তার প্রবাসী ভাই তার পরিবারের একটা ছবি পাঠিয়েছে। ছবিটা ভারি সুন্দর- সাগরের মনে হলো সেটা ঘরে টানিয়ে রাখলে মন্দ হয় না। তাই সে প্রিন্টারে সেটা প্রিন্ট করে নিল।

ই-বুক রিডার ব্যবহার করে বই পড়া যায়

ই-মেইলে চিঠিপত্রের উত্তর দিয়ে সে তার প্রিয় কয়েকটা গান বাজাতে শুরু করে দেয়। গান শুনতে শুনতে সে তার ই-বুক রিডারে একটা বই পড়তে শুরু করে। প্রিয় বই পড়তে পড়তে কীভাবে যে সময় কেটে গেল সাগর বুঝতেই পারল না!

যখন বইটা শেষ হয়েছে তখন একটু বেলা হয়ে গেছে। হঠাৎ করে তার মনে হলো বাসায় খাবার নেই। বাজার করা হয়নি। সাগরের হঠাৎ মনে হলো ইন্টারনেটে খাবারের অর্ডার দেয়া যায়- তারা বাসায় এসে খাবার পৌঁছে দেয়। সাগর তখনই ইন্টারনেটে তার প্রিয় খাবার বিরিয়ানির অর্ডার দিয়ে দেয়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসিখুশি এক তরুণ তার বাসায় বিরিয়ানি নিয়ে আসে। সাগর বলল, "আমার বাসাটা খুঁজে পেতে তোমার কি কোনো সমস্যা হয়েছে?” তরুণটি বলল, "একটুও অসুবিধে হয়নি- আমি জিপিএসে আপনার ঠিকানাটা দিয়ে দিয়েছি, সেটা আমাকে কোন পথে আসতে হবে বলে দিয়েছে।"

সাগর খেতে খেতে আবার তার কম্পিউটারে পৃথিবীর খবরাখবর নেয়। নিউট্রিনো (Neutrino) নিয়ে বিজ্ঞানের একটা চমকপ্রদ খবর বের হয়েছে। নিউট্রিনো কী- সাগর সেটা জানে না তাই সে উইকিপিডিয়াতে নিউট্রিনো সম্পর্কে চমৎকার একটা লেখা পড়ে নিল। শুধু তাই নয়, নতুন একটা সিনেমা খুব নাম করেছে- সিনেমাটা দেখলে মন্দ হয় না। সাগর তখনই সিনেমাটা ডাউনলোড করতে শুরু করে দেয়, রাতে সে সেটা দেখবে।

কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ঘরে বসে সারা পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ করা যার

বিকেলে বন্ধুর বাসায় জন্মদিনের উৎসবে যাবে- তাকে কিছু একটা উপহার দেয়া দরকার। বন্ধুটি বই পড়তে খুব ভালোবাসে তাই সাগর ইন্টারনেটে একটা বই অর্ডার দিয়ে দেয়, বন্ধুর বাসায় বইটা পৌঁছে। যাবে। সে নিজের জন্যেও একটা বই অর্ডার দিল। ব্যাংকে যথেষ্ট টাকা আছে কি না জানা দরকার। সাগর তখন তার ব্যাংকে খোঁজ নিল, সেভিংস থেকে কিছু টাকা তার চেকিং একাউন্টে নিয়ে আসে।

দলগত কাজ
এখানে উল্লেখ করা হয়নি কিন্তু তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আর কী কী কাজ করা সম্ভব তার একটি তালিকা তৈরি করো।

ঘর থেকে বের হওয়ার সময় তার মোবাইল বেজে উঠে- বাড়ি থেকে তার মা ফোন করেছেন। সাগর জিজ্ঞেস করল, "মা ভালো আছ তোমরা?" মা বললেন, "হ্যাঁ ভালোই আছি, তবে তোর বাবার চশমাটা মনে হয় বদলাতে হবে, স্পষ্ট নাকি দেখতে পায় না।” সাগর বলল, "তুমি চিন্তা করো না মা, আমি সামনের সপ্তাহে চলে আসব, বাবাকে চোখের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।"

মায়ের সাথে কথা শেষ করে সাগর মোবাইল টেলিফোনে তখনই ট্রেনের টিকেট বুক করে দেয়। ভালো চোখের ডাক্তারের খোঁজ নেবার জন্য সে রাতে ই-চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নেবে।

বন্ধুর বাসায় জন্মদিনের উৎসবে সবাই মিলে খুব আনন্দ করল, ছোট বাচ্চারা ঘরের এক কোনায় হইচই করে কম্পিউটার গেম খেলছে। রাতে খাবার খেয়ে সাগর বাসায় ফিরে আসে। পরদিন কাজে যেতে হবে তাই সে সকাল সকাল শুয়ে পড়ে। বিছানায় শুয়ে শুয়ে সে শেষ খবরটা শুনে নেয়। উপগ্রহ থেকে ছবি তুলে দেখা গেছে ঘূর্ণিঝড়টা ঘুরে অন্যদিকে চলে গেছে। দেশের কোনো বিপদ নেই। খবরটা শুনে সাগরের মনটা ভালো হয়ে যায়- নিশ্চিন্ত মন নিয়ে সে ঘুমাতে গেল।

তোমরা কি লক্ষ করেছ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি দিয়ে সে সাগর সারাটা দিন কত কাজ করেছে? অল্প কিছুদিন আগেও কেউ কি এটা কল্পনা করতে পারতো?

Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...